শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫, ০২:৩৯ অপরাহ্ন

শিরোনাম :
১৫ বছরের জঞ্জাল ১৫ মাসে পরিষ্কার করা যায় না: ধর্ম উপদেষ্টা নির্বাচন পর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ না করার নির্দেশনা জাতীয়‍ নির্বাচনের আগে গণভোট না হলে এটা মূল‍্যহীন: জামায়াত আমির এ দেশের মানুষ কখনও পরাজয় বরণ করেনি, করবেও না: মির্জা ফখরুল গণভোটের নামে নির্বাচন পেছালে বিএনপি মানবে না: ব্যারিস্টার খোকন নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিল রাবি ছাত্রীসংস্থা যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাবিতে শিশু উৎসব পটিয়ায় জামায়াতের ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্পে ৯০০ রোগীর সেবা ইসলাম ও আধুনিক সমাজব্যবস্থার সমন্বয়:উম্মে হানী কুড়িগ্রামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অর্ধকোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি

শাওয়াল মাসের ছয় রোজার পুণ্য

আল্লাহর রহমতে মাসব্যাপী পবিত্র মাহে রমজানে ইবাদত বন্দেগি করে প্রত্যেক মুমিন হৃদয় প্রশান্তিতে ভরপুর। মহান আল্লাহ মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁরই ইবাদতের জন্য। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘আমি জিন ও মানবজাতিকে একমাত্র আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি (সুরা জারিয়াত-৫৬)। ’ আল্লাহর একান্ত ইচ্ছা প্রত্যেক বান্দা তাঁর ইবাদত সম্পন্ন করার মাধ্যমে ইহ ও পরকালীন জীবনকে সরল সঠিক পথ সিরাতুল মুসতাকিমে গড়ে তুলবে।

ইবাদত মূলত দুই প্রকার। ফরজ ইবাদত; যেমন- নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ইত্যাদি। নফল ইবাদত; যেমন- নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, দরুদ শরিফ, দানখয়রাত, নফল রোজা রাখা ইত্যাদি। 

মানবজাতি মূলত তখনই মহান আল্লাহর কাছে প্রকৃত সম্মানিত ও প্রিয় হবে, যখন তার প্রতিটি কাজ হবে একমাত্র আল্লাহরই উদ্দেশে।

সুখদুঃখে একমাত্র তাঁরই ইবাদত করবে, তাঁকেই ভালোবাসবে। তাঁরই নৈকট্য লাভের চেষ্টায় সব সময় ব্যস্ত থাকবে। ফরজ ইবাদত সুসম্পন্ন করার সঙ্গে সঙ্গে নফল ইবাদতে অধিক মনোযোগী হবে। নফল ইবাদতগুলোর মধ্যে নফল রোজা বান্দাকে অতি সহজেই মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছে দেয়।
কারণ রোজা এমন এক ইবাদত, যা জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ঢালস্বরূপ এবং এর প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহ নিজেই দিয়ে থাকেন বলে হাদিসে কুদসিতে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। মাহে রমজান চলে যাওয়ার পরও বান্দা যেন সিয়ামসাধনা অব্যাহত রাখেন সে জন্য প্রতি চান্দ্র মাসের ১৩ থেকে ১৫ তারিখের রোজা, আশুরার রোজা, ৯ জিলহজ আরাফার দিনের রোজা, ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)-এর রোজাসহ অন্যান্য নফল রোজার বিধান দিয়েছেন প্রিয় নবীজি হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.)। ফরজ নামাজের কমতিগুলো পূরণ করতে যেমন নফল নামাজ রয়েছে তেমনি ফরজ রোজার পরও শাওয়ালের সুন্নত রোজা রয়েছে রমজানের পূর্ণতা প্রদান করতে। রোজাদার যদি অনর্থক বাক্যালাপ, কুদৃষ্টি পাপাচার-কামাচার প্রভৃতি কাজ থেকে সম্পূর্ণ বাঁচতে না পারে, তাহলে তার রোজার সওয়াব কমে যায়। আর কমতির সওয়াব পূর্ণ করতেই শাওয়ালের ছয়টি রোজাসহ বছরজুড়ে রয়েছে নানা উপলক্ষে নফল রোজা।
এই শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজার মাধ্যমে রমজানের রোজার শুকরিয়া আদায় করা হয়। 

যখন কোনো বান্দার আমল আল্লাহ কবুল করেন তখন তাকে অন্য নেক আমলের তৌফিক দেন। সুতরাং এ রোজাগুলো রাখতে পারা রমজানের রোজা কবুল হওয়ার লক্ষণও বটে। রসুলুল্লাহ (সা.) নিজে এ রোজা রাখতেন এবং সাহাবায়ে কেরামদের রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন। জলিলুল কদর সাহাবি হজরত আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল, অতঃপর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন সারা বছরই রোজা রাখল (মুসলিম শরিফ, হাদিস নং-১১৬২)। ’

এ হাদিসের ব্যাখায় মুহাদ্দিসগণ বলেন, রমজানের ৩০টি রোজার সঙ্গে শাওয়ালের ছয়টি রোজা যুক্ত হলে মোট রোজার সংখ্যা হয় ৩৬টি। আর প্রতিটি পুণ্যের জন্য ১০ গুণ পুরস্কারের কথা উল্লেখ রয়েছে পবিত্র কোরআনুল কারিমে। সুরা আনআমের ১৬০ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি একটি সৎ কাজ করল সে ১০ গুণ সওয়াব পাবে। ’ এই হিসাবে যে ব্যক্তি রমজানের এক মাস রোজা রাখল সে ১০ মাস রোজা রাখার সওয়াব পাবে। আর ছয়টি রোজার ১০ গুণ ৬০ দিন। অর্থাৎ দুই মাস। আর এ দুই মাস মিলে ১২ মাস রোজার সওয়াব। তাহলে ৩৬টি রোজার ১০ গুণ হলে ৩৬০টি রোজার সমান (এটি পুরস্কারের দিক থেকে)। অর্থাৎ সারা বছর রোজার সমান সওয়াব হবে। ’ হজরত সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘রমজানের রোজা ১০ মাসের রোজার সমতুল্য আর (শাওয়ালের) ছয় রোজা দুই মাসের রোজার সমান। সুতরাং এই হলো এক বছরের রোজা (নাসায়ি শরিফ, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা. ১৬২)। ’

সারা বছর রোজা রাখার পুণ্যের ব্যাখ্যা অন্য হাদিসে এভাবে পাওয়া যায়। হজরত উবাইদুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রসুল (সা.) কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ইয়া রসুল (সা.), আমি কি সারা বছর রোজা রাখতে পারব?’ তখন রসুল (সা.) বললেন, ‘তোমার ওপর তোমার পরিবারের হক রয়েছে। কাজেই তুমি সারা বছর রোজা না রেখে রমজানের রোজা রাখ এরপর রমজান-পরবর্তী শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখ, তাতেই সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাবে। (তিরমিজি শরিফ, প্রথম খণ্ড, পৃ. ১৫৭)। ’

সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব কে না পেতে চায়! ইচ্ছা করলেই তো সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব লাভ করা সম্ভব। আসুন, আমরা সাওয়াল মাসে ৬ রোজা রাখার নিয়ত করি। আল্লাহ আমাদের আমল করার তৌফিক দিন। আমিন।

লেখক : খতিব, সিদ্দিকে আকবর (রা.) জামে মসজিদ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved bijoykantho© 2025